তুই সিঙ্গেল?! কেন ? প্রেম করবি না? তোর দ্বারা প্রেম হবে না? আসলে প্রেম সবাই করতে পারে না ?? আরও খারাপ করে বললে, তুই হিজড়া নাকি?? এই রকম বিব্রতকর প্রশ্নের সম্মুখীন আমরা প্রতিনিয়ত হয়। এসব শুধুমাত্র একটা জিনিসের জন্য, সেটা হচ্ছে প্রেম।
প্রেম বলতে বুঝতাম নায়ক-নায়িকার প্রেম যেটা বিটিভি তে দেখতে পেতাম কিন্তু ১৫ বছর বয়সে একবার রাজশাহী চিড়িয়াখানা গেছিলাম ঘুরতে তারপর অন্য মাত্রার প্রেম দেখতে পেলাম সেখানে। তখন থেকে আমার কাছে প্রেম এর ওজন হাওয়াই মিঠাই এর মত হয়ে গেল। এটা একান্তয় আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি, কেউ গায়ে লাগাবেন না।
তবে ছোট থেকে চলতে চলতে অনেকবার পিছনে ঘুরে তাকিয়েছি , যা থেকে মনে একটা আলোড়ন সৃষ্টি হত কিন্তু এর কোন প্রভাব আমার ওপরে পড়েনি । কারন ছিল আমি বয়েজ স্কুলের ছাত্র ছিলাম , সারাদিন ব্যস্ত থাকতাম বিশেষ কিছু দুষ্টুমিতে যা ওই বয়সে একটু ভিন্ন মাত্রা যোগ করত। যাইহোক এইসব কথা বাদ দিয়ে মুল ঘটনায় আসি.
২০১৫,সেপ্টেম্বরঃ কলেজে ভর্তি হয়েছি মাস তিনেক আগে , নতুন পরিবেশে এসে ভালই লাগছিল। বন্ধুরা সব মেসে এসে উঠল কিন্তু আমি বোনের বাসায় , দুলাভাই এর চাকুরিসুত্রে তারা রাজশাহীতে বাসা ভাড়া করে থাকে। মফস্বল থেকে উঠে আসা আমার মত ছাত্রের জন্য এই আবাসন আশীর্বাদ এর মতো । কলেজ মনের মতো , নিউ গভঃ ডিগ্রী কলেজ , সেরা না হলেও নামকরা এটুকু বলতেই পারি।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ড্রেস পরে কলেজে যাওয়া, বিকেলে পদ্মার দিকে ঘুরতে যাওয়া, আর প্রাইভেটে যাওয়া ছাড়া কোন কাজ নেই তবে , মাঝেমধ্যে একটু বাজার করতে হয়। সেইরকম একটি দিনে বাজার করে বাড়ি ফিরছি , আমরা থাকতাম তিন তলার একটি ফ্ল্যাটে , সেখানে দেখি আমার ছোট ভাগিনা আমাকে মামা মামা বলে ডাকছে , এদিকে আমাদের বাসার সামনে নিউ ডিগ্রী কলেজের মশিউর স্যার পদার্থ প্রাইভেট পড়াতেন । তখন স্যারের ছুটি , সব মেয়ে বের হচ্ছে , আমি পড়ে গেলাম অস্থিরতায় , বেশি মেয়ে দেখলেই কেমন কেমন লাগে । যাইহোক সেই যাত্রায় পার হয়ে গেলাম।
পরদিন সকালে কলেজে যাচ্ছি , গলির রাস্তা পার হয়ে মূল রাস্তায় যেয়ে অটো নিয়ে কলেজে যেতাম , প্রায় দেখতাম রাজশাহী কলেজের ড্রেস পরা দুইটা মেয়ে ওই সময়ে কলেজে যেত, বেশ পরিপাটি বিশেষ করে খুব সুন্দর করে চুল টা বাধা থাকতো । আমি আমার মতো করে দেখতে থাকি । বয়সের দোষে, খুব ভালো না লাগলেও তাকাতাম নিয়মিত , তাছাড়া রাজশাহী কলেজের প্রতি একটা দুর্বলতা তো ছিলই।
এভাবে দেখেছি প্রায় ১ মাস মতো। তারপর জানতে পারলাম তারা দুজনেই সাইন্স এ পড়ে। আমার কলেজ এর আগে ওদের কলেজ শুরু হতো কিন্তু আমি তাদের দেখার জন্য আগেই বের হয়ে যেতাম। বাসায় যেন না দেখতে পায় তাই আড়ালে থাকতাম ।
আমি এখন পর্যন্ত দুইজনের কথা বলছি , কিন্তু আমার পছন্দ একজন , ওই ডান পাশের মেয়েটা,চোখগুলো নিরেট কালো , পরিপাটি একটা মেয়ে।
দিনের পর দিন আমি তার প্রতি আসক্ত হতে থাকি কিন্তু কি করব তা বুঝতে পারি না। যায়হোক তখন আমি তার অপেক্ষায় থাকি সারাক্ষণ , কখন সে বের হবে সময়গুলো রীতিমতো নোট করতে থাকি , কেন ঘুরছি তা জানি না কিন্তু ঘুরতে থাকি।
শনি, সোম, বুধ মশিউর স্যারের কাছে ৩ টাই , অন্য দিন মহিলা কলেজ রোডের দিকে
একরকম ডিউটি করার মতো হয়ে গেছিলো, এমনকি আমার কলেজ আগে ছুটি হলে আমি রাস্তার পাশে দাড়িয়ে-বসে থাকতাম । দিনে একবার না দেখলে কেমন জানি লাগতো ।
মোটামুটি বছরখানেক এসবের মধ্যে ছিলাম, কিন্তু আমার বন্ধু আমার উন্মাদ অবস্থা দেখে বলে – “ গিয়ে সরাসরি প্রপোজ কর” কিন্তু আমার এদিকে ইচ্ছা ছিলনা । আমি চায়তাম অ্যাডমিশন এর পর এসব নিয়ে ভাবা যাবে। আবার ভাবি, তাকে নিয়ে যে পরিমান চিন্তা করছি তাতে ভালো জায়গায় ভর্তি ও হতে পারব না । তাই সিধান্ত নিলাম যা হয় হবে এবার বলে দিব। এতদিন ঘুরছি তার পিছনে ঘুরছি সেও হইত লক্ষ করছে কিন্তু মেয়ে তাই কিছু বলতে পারছে না। কিন্তু অল্প কয়েকদিন এর মধ্যে বুঝতে পারলাম আমার দ্বারা একাজ সম্ভব না , তার সামনে গেলেই বা তাকে দেখলেই বেলুনের মতো চুপসে যেতাম । তাই এই চিন্তা বাদ দিয়ে ঘুরতে থাকি পিছু পিছু , চেষ্টা করি আড়ালেই থাকতে আর সেও কেমন জানি অদ্ভুত মনযোগী ছিল । দেখতাম কারও সাথে মিশছে কি না , কোন ছেলে ? এককথায় নিজের মতো করে খেয়াল রাখতাম।
এভাবে চলতে চলতে একটা দিন আসলো ,আমি জানতে পারলাম আমাদের বাসা পরিবর্তন করতে হবে দ্রুত। অন্য জায়গায় জমি কেনার ফলে ওখানে যেতে হবে । আমি তখন বাক্রুদ্ধ হয়ে গেলাম , এই চিন্তা করে যে, আমি কিভাবে কাটাবো পরবর্তী দিনগুলো , একদিন না দেখলে উন্মাদ হয়ে যায় সেই আমি কিভাবে থাকব।
তার জলতরঙ্গ মেস কি আর দেখতে পাব না ?? নানান প্রশ্ন ঘুরতে থাকে মনে। কিছু কি মিস করব?? না অনেক কিছু ______
তার সাদা-সবুজ কালারের উপর বলপয়েন্ট এর মতো ডিজাইন করা থ্রি-পিছ , ধবধবে সাদার উপর কাজ করা জামা, হলুদ জামা , কলেজ ড্রেস , অসাধারণ সুন্দর করে চুলের বেণী , এমনকি তার সূর্যমুখী ফুলের মত একজোড়া স্যান্ডেল , মোবাইলের পেস্ট কালারের কভার, স্যামস্যাং এর কোন মডেলের কালো একটা ফোন, পানি আনতে যাবার জন্য মাম কোম্পানির ৫ লিটারের বোতলটিও মিস করব মনে হয়, ও আরেকটা জিনিস , তার নাক-ফুল , অনেকে বলে এখনকার হালে নাক-ফুল চলে না কিন্তু সে তো নাক-ফুল ছাড়া অসম্পূর্ণ বলে আমি মনে করি।
অতঃপর সেই দিন হাজির হল , বাসা পরিবর্তন করতে হবে , তবে আগের দিন বাজার থেকে একটা গ্ল্যাডিওলাস ফুল নিয়ে এসেছিলাম আর সারাদিন কাজের মধ্যে ভাবছিলাম যদি জলতরঙ্গ হতে কেও আসে তাকে আজ সব বলে দিব , সব ইচ্ছা, অভিযোগ কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস সেদিন একটিবারের জন্য তাকে দেখতে পাইনি, অনেকক্ষণ দাড়িয়েও ছিলাম।
নতুন বাড়ি, সবার মধ্যে খুব আনন্দ কিন্তু আমার উপর ভর করেছে আকাশভরা বিষাদ , কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। এইবার অবশ্য বাড়ির সবাই মোটামুটি আন্দাজ করতে পেরেছে, কিছু তো একটা হয়েছে বিশেষ করে বড় আপা। কয়েকদিন থাকলাম চুপচাপ, আর বুঝলাম দূরত্ব কাকে বলে।
তারপরও মনের খোরাক পুরন করতে গেলাম সেখানে কিন্তু কিছু আন্দাজ করতে পারি না , যেখানে থেকে তাকে দাড়িয়ে থেকে দেখেছি , ছাদের উপর থেকে দেখার চেষ্টা করেছি , কত বিকেল জানালা বা বারান্দায় বসে কাটিয়েছি তার জন্য আজ সেখানেই নিজেকে অভ্যাগত মনে হয় । আমাদের বাসা আর জলতরঙ্গ মেস ছিল পাশাপাশি শুধু মাঝে একটা একতলা বাড়ি ছিল।আমরা থাকতাম তিন তলায় তাই আমার জানালা দিয়ে মেস সরাসরি দেখা যেত , অনেক গবেষণার পর তাদের রুম কোনটা সেটা বুঝতে পেরেছিলাম ।সেটা ছিল চার তলার ডান দিকের প্রথম টা। কত উঁকি মারতাম কিন্তু মেস মালিক উকিল , খুব রাগী ,পরে শুনেছি আমার নামে অভিযোগ ও এসেছিলো কিন্তু বাড়ির মালিক আমাকে নিন্তান্ত্য নম্র, ভদ্র বলে পার করে দিয়েছে।
বাসাতেও মাঝে মাঝে বলত , ওইদিকে না তাকাতে কিন্তু কে শুনে কার কথা।
ঘুরতে ঘুরতে মাঝে মাঝে দেখতে পেতাম , আর আনন্দে আত্মহারা হতাম । এদিকে এইচএসসি পরিক্ষা দরজায় টোকা দিচ্ছে তাই একটু পড়াতে মনোযোগ দেবার চেষ্টা করলাম তবুও ঘুরতাম , জাদুঘর মোরে দাড়িয়ে থাকতাম , তখন মনে হয় সে জামিল ভাই আর জয় ভাইয়ের কাছে পড়ত।
মাঝেমাঝে দেখতাম । নতুন করে প্রপোজ করার কথা ভাবিনি , শুধু ভাবছিলাম কোন এক জায়গায় চান্স পেলেই যাব , তার কাছে। সে তো খুব ভালো , তার ভালো জায়গায় চান্স সময়ের ব্যাপার মাত্র।
এভাবে পরীক্ষা শুরু হয়ে গেল, ইচ্ছা থাকা সত্তেও দেখতে পাইনি।
তারপর শুরু হল ডিজিটাল যুগের বিশ্বযুদ্ধ নাম ভর্তি পরীক্ষা, কোচিং এ ভর্তি হলাম , খুব হালকাভাবে নিতে থাকলাম পড়ালেখা । ভাবতাম এতো ভালো কলেজে পড়ি , চান্স হয়ে যাবে এমনিতে। তাই আবার তাকে ফলো করা শুরু করলাম। সে তো পুরো দমে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে মনে হল। এদিকে আমি কয়েক জায়গায় পরিক্ষা দেবার পর নিজের অবস্থান বুঝতে পারলাম। তখন, একটু ভয় পেয়ে পড়তে শুরু করলাম।
আর কয়েকটা ভার্সিটি বাকি আছে পরীক্ষা দিতে , এইরকম দিনে আমি একাই পদ্মার পাড়ে বসে সন্ধ্যার পর সময় কাটাতাম, একদিন রাস্তায় যেতে যেতে দেখি টিনা মানে সেই মেয়েটি । দুঃখিত আপনাদের তার নাম বলা হয়নি , নাম জানতে পেরেছিলাম ২০১৬ সালের মাঝামাঝিতে।
যেই দেখা ,সেই নেমে পড়লাম অটো থেকে পিছু পিছু প্রায় ২ ঘণ্টা ঘুরতে ঘুরতে হারালাম তাকে, বাড়ি ফিরে গেলাম।
সব জায়গায় পরীক্ষা দেয়া শেষ , শুধু মাওলানা ভাসানী বাকি , বেগম রোকেয়া দিয়ে এসেছি, পরীক্ষা অন্যসবগুলোর চাইতে ভালো হয়েছে। আগামী ১৫ ডিসেম্বর রেজাল্ট ।
বাড়ির ঝাড়ি , বন্ধুদের চান্স পাওয়ার আনন্দ তাছাড়া পাশের বাসার অ্যান্টির মেয়ে নিয়ে দিনকাল ভালো যাচ্ছে না। এইরকম দিনে তার কথা মনে পড়ে খুব , মেসের আশেপাশে সারাদিন দাড়িয়ে থেকে দেখতে পাইনি তাকে , মাঝেমধ্যে ফেইসবুকে সার্চ করি টিনা লিখে কিন্তু হাজারের মাঝে খুজে পাইনা।
১৫ তারিখ রেজাল্ট দিল , অবস্থান ২৪৫ সিট ২০০ এর মত বিবিএ তে । সবাই বলল হয়ে যাবে ওয়েটিং থেকে , গতবার ২৯০ পর্যন্ত নিয়েছিল । ভালো লাগলো সাথে ভয়ও করল, যদি না হয় । কিন্তু বেগম রোকেয়ার এক ভাই বলল , আল্লাহ ছাড়া কেও আটকাতে পারবে না ।
১৭ দিসেম্বর,২০১৭ স্ক্রল করতে করতে একটি প্রোফাইল এ এসে চোখ আটকে যায়, চেহারা সেই পরিচিত , দেখেই চোখে পানি চলে আসে। নাম সাদিয়া আফরিন টিনা , একটা চিৎকার দিয়ে ইচ্ছা করছিল কিন্তু নামের পরে একটি প্রতিষ্ঠানের নাম দেখে সেটা কল্পনা হয়ে যায় , সেটি হল বিশ্ববিদ্যালয় ।
Studing Animal Husbandry at Bangladesh Agricultural University । কষ্টের ফসল তার ।
আমি তো এদিকে অস্থির সাথে নার্ভাস তবুও রিকুয়েস্ট দিলাম , ভাবলাম যার জন্য আমি দুই বছর ঘুরে বেড়িয়েছি তাকে এটুকু করার অধিকার আছে আমার, তাই সাথে সাথে একটা মেসেজও দিলাম।
‘’ কেমন আছো ,জলতরঙ্গের বাসিন্দা??’
উত্তর আসলো “ আমি আপনাকে চিনি??
আমি কি বলব , বুঝতে পারছি না, চোখ দিয়ে পানি আর কপাল থেকে ঘাম ঝরছে অনবরত । আসলেই তো আমি তো তাকে কোনদিন বুঝতে দিইনি , যে আমি তার পিছনে ঘুরি , যাইহোক বললাম তোমার পাশের বাসিন্দা ।
তারপর সব বললাম একে একে , সে তো প্রত্যেক কথা শুনে আকাশ থেকে পড়ার মতো অবস্থা, খুবই অবাক হয়ে বলল “ এতদিন, এতকাছ থেকে আমাকে দেখেছো কিন্তু আমি তোমাকে একবারও দেখেনি ?”
তারপর অনেক কথা হল, জিজ্ঞেস করল “কোন বিশ্ববিদ্যালয় ??” আমি বলে দিলাম -বেগম রোকেয়া । ভাবলাম চান্স তো হয়েই যাবে , তারপর সাবজেক্ট জানতে চাইল , আমি বললাম সামনে ভাইভা (২ জানুয়ারি) । সে বলল ঠিকাছে । আর বারবার বলতে থাকলো “ তুমি এতো তথ্য কিভাবে জানলা?? এটাও কি সম্ভব??” আমি কোন উত্তর না দিয়ে মুচকি হাসতে থাকলাম । তারপর অনেকক্ষণ চ্যাট করলাম । অনেকক্ষণ ।
জীবনে সেই দিন একটা আশা নিয়ে শান্তিতে ঘুম দিতে পেরেছিলাম।
তারপর টুকটাক বিভিন্ন বিষয়ে কথা হতে থাকে । প্রতিদিন নিয়ম করে , সেও মেসেজ দিয়েছিল কয়েকবার এবং একদিন একটা মেসেজ দিয়েছিল “ I am interested “ যা দেখার পর আমি অজ্ঞান হয়ে যাব , এইরকম ব্যাপার।
এভাবেই আমি নতুন বছর বরণ করলাম ।
১ জানুয়ারি ২০১৮ , ভাইভার আগের দিন , খুব আনন্দে আছি , টিনার সাথে চ্যাট হয় নিয়মিত , তার নতুন হল লাইফ খুব ইনজয় করছে ,আমাকে তার ভার্সিটিতে বেড়াতে ডাকছে , আমি ভাবছি বেগম রোকেয়ায় ভর্তি হতে পারলে এখান থেকেই সোজা ময়মনসিংহ যাব ।
আমি সব কথা বলেছি তাকে , সেও খুবই আগ্রহী আমার ব্যাপারে জানতে , এখন খালি মুখোমুখি দেখা করে আরও কথা বলা , তারপর তো …………………ভাবতেই কি যে আনন্দ হতো। কি একটা বছর আসতে চলেছে আমার জীবনে >>
ট্রেনে করে বহু কষ্টে গেলাম রংপুর , বন্ধুর, বন্ধুর মেসে উঠলাম অনেক রাতে কিন্তু কোন কিছু খারাপ লাগছে না খুব আনন্দে যাচ্ছে দিনকাল।
২ জানুয়ারি, সকালে ঘুম থেকে উঠে ভাইভার জন্য প্রস্তুতি নিলাম , তারপর এক বন্ধুর সাথে ভাইভা দিতে গেলাম , বলে রাখি বন্ধুর সিরিয়াল ৩২৯ , তবুও আশা নিয়ে গেছে সে।
বিশ্ববিদ্যালয় খুব ভালই লাগলো , আর না লাগার কি আছে , কোন উপায় নাই এখন যাইহোক এখানেই পেলে হই ।
সিরিয়ালি দাড়িয়ে ভাইভা দিলাম, আমার ছিল ২৪৫, আমার পিছনে আরও অনেককে (১০০+) দাড়িয়ে থাকতে দেখে নিজেকে একটু ভালো ছাত্র মনে হল।
ভাইভা শেষ করে বন্ধু,বড়ভাইসমেত একটা রাজকীয় খাইদাই দিলাম । বড় ভাইয়ারা এমনভাবে আপন করে নিল, মনে হল আমি তাদের কোন এক জন । তারপর শহর ঘুরতে বেরুলাম সাথে কিভাবে ময়মনসিংহ যাওয়া যায় তার খোঁজও নিলাম।
বেগম রোকেয়ার ভাইভার রেজাল্ট দিবে সেইদিন রাতেই , পরদিন ভর্তি , আব্বু কাল সকালে ভর্তির টাকা নিয়ে রউনা দিবে যদি হয়।
রাত ১০ টা বাজে , কিন্তু এখনো দেইনি রেজাল্ট , টিনা বাসায় তাই আলাপও বন্ধ , অনেক চিন্তা হচ্ছে। বাসা থেকেও আব্বু বারবার ফোন দিচ্ছে কি হল তা শুনার জন্য,
এভাবে ১১, ১২, ১ টা বাজলো তবুও দিচ্ছে না রেজাল্ট, এক বড় ভাইকে ফোন করায় বলল , “ঘুমিয়ে যাও , সকালে পেয়ে যাবা ,হয়তো কোন সমস্যা “
ঘুমালাম , কিন্তু ঘুম আসছে না ।
রাত ৩.০০ টাই চেক করলাম দেখি দিয়েছে ,কিন্তু সি ইউনিট এ ক্লিক করতেই দেখি C Unit is already fill up . মাথা গরম হয়ে গেল। তারপর মূল রেজাল্ট দেখে আমি কান্না শুরু করলাম ২৪৪ পর্যন্ত সাবজেক্ট দিয়েছে আর আমি ২৪৫ ,এর পর কিছু নাই , মানে আবার ওয়েটিং ।
কি একটা কপাল !!
বাড়িতেও সবার মন খারাপ , বড়ভাইয়েরা সব বলল আজ ৩ তারিখ রাতে ফাইনাল রেজাল্ট দিবে । থাকলাম আরেকটা দিন , কিন্তু আবারও একি কথা , সোজা কথা আমার চান্স হল না।
তবে কেন ???
সকালে বাড়ির উদ্দ্যেশে রউনা দিলাম, মনকে শান্ত রাখার চেষ্টা করলাম কিন্তু পারি না , খালি দুচোখ দিয়ে পানি বের হয় , যেই ছেলে আমি কোনদিন কাঁদি না, সেই লোকজনের সামনে এরকম করি, অনেকেই আমাকে আড়চোখে দেখছিল। না খেয়ে বাড়ি ফিরলাম , কিভাবে এলাম তা মনে নেই পুরোপুরি তবে ৬-৭ ঘণ্টার পথ ১১ ঘণ্টায় আসলাম । বাসায় সবারও মন খারাপ, আমি সবাইকে অনেক আশা দিয়েছিলাম এই ব্যাপারে কিন্তু কি হল এসব>>>???!!!
একবার ভাবলাম যে পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে এবং আমার নম্বরের পার্থক্য মাত্র ৫.৫৫ । আর একটু ভালো করে পড়লে বা আইসিটি তে আর কটা প্রশ্ন কমন পড়লেই তো হয়ে যেত কিন্তু পরক্ষনেই বাসায় এসে বড় আপা দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় একটা সংবাদ দেখাল যেখানে লেখা ছিল “ বেরোবিতে সি ও এফ ইউনিট এ জালিয়াতির অভিযোগ “ ( ৪ জানুয়ারি,২০১৮) ।
তারপর আর কি করব , বুঝতে পারছিলাম না , এই আমি সিস্টেম এর প্যাঁচ এ পড়ে সব হারাতে চলেছি।
প্রায় ১০-১২ দিন আমি টিনাকে কোন মেসেজ দিইনি বা সেরকম কোন অবস্থায় ছিলাম না।
যাইহোক সে আমাকে মেসেজ দিয়েছে- “ কোন সাবজেক্ট এ ভর্তি হয়েছ??” আমি কোন উত্তর দিতে পারিনি , কি বা দিব ?? ভাবতে ভাবতে .৩-৪ দিন কোন উত্তর দিইনি কিন্তু একবার ভাবলাম সব বলে দিই । অন্যদিকে কিভাবে সে এসব কথা গ্রহন করবে , তাই কিছু বলিনি। আসল কথা আমি তাকে কোনমতে হারাতে চাইনি ।
অনেক কষ্ট করে একটা মিথ্যা কথা বললাম যে আমি মার্কেটিং এ ভর্তি হয়েছি, তারপর সে অভিনন্দন জানালো এবং আবারও ক্যাম্প্যাস ঘুরতে আমাকে ডাকল। অন্যদিকে আমি একেবারে ভেঙ্গে পড়েছি , উভয়সঙ্কট অবস্থা আমার , কি করব বুঝতে পারছি না। এদিকে মাওলানা ভাসানির পরীক্ষাও হয়ে গেছে, দিতে পারি নি , আর কোথাও নাই পরীক্ষা এখন একমাত্র অবলম্বন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এ ভর্তি হয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করা।
এতদিন সে কি আমার জন্য অপেক্ষা করবে?? ভাবতে থাকি এরই মধ্যে মার্চ মাস চলছে , টিনা পুরদমে ক্লাস করছে , খুব কথা হয়না , আমার ক্লাসের ব্যাপারে জানতে চাই , আমি মিথ্যা বলি কিন্তু মন যেন সায় দেই না।
এভাবে চলতে চলতে আমি তাকে বলি আমি দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দিতে চায় তায় তুমি কি আমার জন্য অপেক্ষা করবে???
সে বলে – “ আমি এসব পছন্দ করি না “ এই কথা শোনার পর আমি আরও ভেঙ্গে পড়লাম তাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু কোন কাজ হলনা , কেনই বা হবে , কে আমি?? – সামান্য একটা গল্প , ভার্চুয়াল একটা মানুষ , যাকে সে চিনে না , জানে না , কিভাবে সে বলবে – তোমার জন্য আমি অপেক্ষা করব । এটা তো একতরফা ভালবাসা ছিল।
তারপরও সে যথেষ্ট আগ্রহী ছিল কিন্তু আমি তো যোগ্য হতে পারি নি বা কেউ হতে দেইনি , সিস্টেম আমাকে নিয়ে খেলা করেছে।
তারপর থেকে তাকে অনুরধ করার মতো কোন শক্তি আমার ছিলনা, শুধু দুঃখ সাথে, আর অপেক্ষা করতে থাকি কখন সে ভার্চুয়াল আমাকে ভুলে অন্য কারো হাত ধরে। কারন তার কোন কিছুর অভাব ছিল না কিন্তু আমি ছিলাম ফকির, সিস্টেমের ম্যারপ্যাচে পড়া ফকির ।
যা ভেবেছিলাম তাই হল , সে এক ছেলের সাথে হাত ধরা ছবি দিল অনলাইন এ সময়টা ১৭ জুলাই ২০১৮ সন্ধ্যা ৭.৩৬ মিনিট। সেই হাতটা আমার কেন নই???- নিজেকে প্রশ্ন করলাম । ধীরে ধীরে তার প্রেমাভিযান দেখতে থাকলাম , এখনো দেখি।
আমি কিন্তু নিউটন মহাশয়ের তৃতীয় সুত্র খুব মানি , প্রতিক্রিয়া নীতি মানে তার প্রতি আমার যে নিখাদ ভালবাসা , শ্রদ্ধা আরও অনেককিছু আমি অবশ্যই ফেরত পাব কোনদিন , কোন একজনের কাছ থেকে । আমার চেষ্টার কোন অভাব ছিল না , তাকে দেখতে পেলে আমি মসজিদে দান করতাম , কোনদিন চাইনি তাকে বলতে ভালবাসি, যাতে সে বিব্রত না হয় ।
কিন্তু কেন জানি সৃষ্টিকর্তা তাকে আমার হতে দিলনা। হইত এখানেই আমার মঙ্গল নিহিত।
তবে সে পারতো আমাকে একবার মিথ্যে দিয়ে বলতে , “ আমি আছি তোমার পাশে , তুমি এগিয়ে যাও কিন্তু তা করেনি বা পারেনি । তবে হইত পারতো>>
কোন অভিমান নেই তার প্রতি, তবে হিংসা আছে , আমার একটা টাইম মেশিন দরকার , আমি আবার ফিরে যেতে চায় ।
দেখা হবার প্রথম দিনই তাকে বলতে চায় – ‘ এই মেয়ে তোমাকে দেখলে আমার এক অনামিক অনুভুতি হয় , আমি তোমায় ভালবাসি ‘ তারপর হইত শুরু হতে পারতো এক অপরিপক্ব প্রেমের কাহিনী।
২০২০ঃ ভালো আছি, কিন্তু ভালবাসা কথাটা সামনে কেউ বললে খুব খারাপ লাগে তবুও সময়ের সাথে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি টিনাও সাহায্য করছে , টিপস দিচ্ছে কিন্তু আম আমার ভাললাগার স্টপওয়াচ বন্ধ করিনি এখনো…………………………………………………………
৬-৫-২০২০
মোঃ সাব্বির আহমেদ
ব্যবস্থাপনা বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় , কুষ্টিয়া
ধন্যবাদ
ধন্যবাদ
vai puro tai porlam...kichu topic a besi kosto paichi...coming soon my life story...
ReplyDelete